শ্রমিক নিয়োগ নীতিমালা
তৃতীয় অধ্যায়
- শ্রমিক নিয়োগ নীতিমালা -
ফ্যাক্টরীতে শ্রমিক নিয়োগের জন্য সাধারণত: সংশ্লিষ্ট বিভাগ কর্তৃক মানব সম্পদ বিভাগকে শ্রমিক চাহিদাপত্রের ভিত্তিতে করা হয়। আবার কোন কোন ফ্যাক্টরীতে যদি ট্রেনিং সেন্টার থেকে থাকে সেখানেও শ্রমিকের চাহিদাপত্র দেওয়া হয়। যদি ট্রেনিং সেন্টার হতে আভ্যন্তরীনভাবে শ্রমিক সরবরাহ করা সম্ভব না হয় তাহলে শ্রমিক নিয়োগের জন্য প্রচারপত্র বিলি করা হয় অথবা পোষ্টার লাগানো হয়, শ্রমিক নিয়োগের জন্য। তারপর ফ্যাক্টরীর গেট থেকে ডেকে অথবা ফ্যাক্টরীতে কর্মরত কোন শ্রমিকের মাধ্যমে জোগাড় করে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করার জন্য ফ্লোরে পাঠিয়ে দেওয়া হয় কর্ম দক্ষতা পরীক্ষা করার জন্য। এর জন্য সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি সারাদিন ধরে কর্মদক্ষতা নির্ণয়ের জন্য কাজ করানো হয় আর দিনের শেষে যদি উত্তীর্ন হয় তাহলে পরবর্তী দিন আবার আসতে বলে তা না হলে বলে দেওয়া হয় তোমার কর্মদক্ষতা খারাপ সেজন্য তোমার চাকুরী হবে না। এক্ষেত্রে একটা জটিলতার সম্ভাবনা দেখা দেয়। কারন সারাদিন কাজ করানোর পর অনেক সময়ই তার জন্য কোন টাকা দেওয়া হয়না। তাই সবচেয়ে প্রাসংঙ্গিক নিয়োগ পদ্ধতি হলো ওয়ার্ক ষ্টাডি অফিসারদের মাধ্যমে কর্মদক্ষতার পরীক্ষা করা এবং তারপরই নিয়োগ দেওয়া। সবার আগে মেডিক্যাল চেক আপ করানো অত্যন্ত জরুরী এবং যদি মেডিক্যাল চেক আপ এর পর ফিট বলে ডাক্তার সার্টিফিকেট দেয় তাহলেই তাকে কর্মদক্ষতার জন্য পাঠানো যেতে পারে।
কোর শ্রমিককে যখন নিয়োগ দেয়া হবে তার আগে অবশ্যই দেখতে হবে তার চাকুরীর অতীত ইতিহাস। আজকাল প্রায় সকল ফ্যাক্টরী শ্রমিকের নিয়োগের আগে তার ব্যক্তিগত চাকুরীর ইতিহাস যাচাই করে নিতে চেষ্টা করে। কারন হলো অনেক সময় দেখা যায়, অন্য কোন ফ্যাক্টরী হতে অসদাচরনের দায়ে অথবা অন্য কোন দোষে চাকুরী হারিয়ে অথবা গুপ্তচর জাতীয় শ্রমিক চাকুরী নিতে আসে এবং চাকুরী পেয়েও যায়। পরিশেষে দেখা যায় ঐ শ্রমিকই ফ্যাক্টরীতে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করছে। তাই সংশ্লিষ্ট শ্রমিক নেওয়ার আগে তার চাকুরীর ইতিহাস দেখে নেওয়া দরকার। যাই হোক, ফ্যাক্টরী কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সরাসরি শ্রমিক নিয়োগ করা যেতে পারে আবার ঠিকাদারের মাধ্যমেও শ্রমিক নিয়োগ করা যেতে পারে। যে ভাবেই নিয়োগ করা হোক, শ্রমিক নিয়োগের সময় তাকে অবশ্যই নিয়োগপত্র দিতে হবে এবং শ্রমিকের কাছ খেকে নিয়োগের জন্য আবেদন পত্র নিতে হবে যাহাতে শ্রমিকের বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা অবশ্যই লিখে নিতে হবে, প্রয়োজনে ফোন নাম্বার, জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে হবে। এ বিষয়ে, বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ৫ ধারা বলে- “কোন মালিক নিয়োগপত্র প্রদান না করিয়া শ্রমিককে নিয়োগ করিতে পারিবে না, এবং নিয়োজিত প্রত্যেক শ্রমিককে ছবিসহ পরিচয়পত্র প্রদান করিতে হইবে। তাই এই ধারা অনুযায়ী শ্রমিক নিয়োগের পর প্রত্যেক শ্রমিক মালিকের নিজস্ব খরচে সার্ভিস বুক প্রাপ্য হবেন যা বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ৬ ও ৭ ধারা অনুযায়ী পালনীয়। শুধু তাই নয়, শ্রমিক নিয়োগের পর প্রত্যেক শ্রমিকের নাম নির্দিষ্ট রেজিষ্টার্ড বুকে সংরক্ষণ করা দরকার যাতে তার কাজের ধরন ও প্রকৃতি সহজেই বুঝা যায়। তাছাড়া, কোন শ্রমিকের যেন ডাবল এন্ট্রি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা দরকার। শ্রমিক নিয়োগের পর আরও একটা বিশেষ কাজ হলো প্রত্যেক শ্রমিকের আলাদা ব্যক্তিগত নথি তৈরী করা এবং তাতে একটা নিখুত নিয়োগপত্র সংরক্ষণ করা। তাই শ্রমিককে এমনভাবে নিয়োগ করতে হবে যাতে করে নিয়োগকৃত শ্রমিকের পরবর্তীতে কোন ধরনের আপত্তিকর বিষয় উত্থাপিত না হয়। একজন ঝামেলাহীন শ্রমিক যেমন উৎপাদনের জন্য গুরুত্বপূর্ন তেমনি, কোম্পানী শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য অপরিহার্য।
কোন শ্রমিককে পুন:নিয়োগ করা যেতে পারে তবে আইনগত জটিলতা এড়ানোর জন্য পুন:নিয়োগ না করাই ভালো। কারন বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুন:নিয়োগকৃত শ্রমিকরা, বর্তমান চাকুরী থেকে দেওয়ার পর তার পূর্বের চাকুরীর জন্য আইনানুগ পাওনাদি দাবী করে এবং সেজন্য অনেক সময় ঝামেলার সৃষ্টি করে থাকে। যদিও সংশ্লিষ্ট শ্রমিক পুন:নিয়োগ পাওয়ার জন্য অনুরোধ করে থাকে তথাপি তাকে পুন:নিয়োগ দেওয়া উচিত নয়। তাছাড়া পুন:নিয়োগের সময় শ্রমিকের পুর্বের চাকুরীর চুড়ান্ত নিষ্পত্তি দেখে নেওয়া দরকার। যদি পুর্বের চাকুরী থেকে চলে যাওয়ার সময় কোন চুড়ান্ত নিষ্পত্তি না হয়ে থাকে, তাহলে পুন:নিয়োগের সময় চুড়ান্ত নিষ্পত্তির কাজ করে তারপর পুন:নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে এবং পুন:নিয়োগের সময় চুড়ান্ত নিষ্পত্তির কাজ করে তারপর পুন:নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে এবং পুন:নিয়োগের পর তার নতুন ব্যক্তিগত নথি তৈরী করতে হবে যাহাতে তিনি নিয়মিত শ্রমিক হিসাবে কাজ করতে পারে।
যখন কোম্পানী কর্তৃক কোন শ্রমিক নিয়োগ করা হয়ে থাকে তখন তাকে কোম্পানীর নীতিমালা অনুযায়ী নির্ধারিত ছকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয় এবং ঠিকাদার কর্র্তৃক যখন কোন শ্রমিক নিয়োগ করা হয় তখন তাদেরকেও নিয়োগ পত্র দেওয়া হয়। উভয়ের শ্রমিকনিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগপত্র প্রদানের বিষয়ে আইনানুগ নির্দেশনা রয়েছে যা পালন করা উভয়ের জন্য আবশ্যকীয়। নিয়োপত্র ছাড়া কোন শ্রমিকের আইনগতভাবে কাজ করানো উচিত নয়। বিশেষ কারণে কোম্পানীতে ঠিকাদার কর্তৃক শ্রমিক নিয়োগ করা হয়ে থাকে যার আইনানুগ দায়িত্ব পালনের ব্যপারে আইনগত অভিভাবক হবে ঠিকাদার এবং শ্রমিকদের তদারকির দায়িত্ব কোম্পানীর উপর ন্যাস্ত থাকে। তাই ঠিকাদার কর্তৃক শ্রমিক নিয়োগের সময় প্রত্যেক শ্রমিকের নিয়োগপত্র দেখে নেওয়ার দায়িত্ব কোম্পানীর। শ্রমিক যেভাবেই নিয়োগ করা হোক না কেন প্রত্যেক শ্রমিককে নিম্নবর্ণিতভাবে নিয়োগপত্র প্রদান করতে হবে-
শরীফ গ্রুপের ফ্যাক্টরী কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে নিম্নবর্ণি ত নীতিমালা যথাযথভাবে অনুসরণ করে থাকে-
১। সকল ধরনের কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব থাকবে ফ্যাক্টরীর পার্সোনেল সেকশনের উপর। পার্সোনেল সেকশন ভিন্ন অন্য কোন ব্যক্তি বা সেকশন বা বিভাগ কর্তৃক ফ্যাক্টরীর কোন কর্মী নিয়োগ করা যাবে না/করা হবে না।
২। কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে পার্সোনেল সেকশন কোম্পানীর অনুমোদিত সংগঠন কাঠামো (Organization Structure) যথাযথভাবে অনুসরণ করবে। পার্সোনেল সেকশন ফ্যাক্টরীর কাজের জন্য প্রয়োজনীয় মানবশক্তি বজায় রাখবে এবং একই সাথে সংগঠন কাঠামোতে নির্ধারিত মানব শক্তির অধিক কর্মী যেন কোনভাবেই নিয়োগ করা না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখবে। কোন বিশেষ কারণে অনুমোদনের অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করতে হলে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে।
৩। কোন সেকশন/বিভাগে কর্মী নিয়োগের প্রয়োজন হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগ/সেকশনকে পার্সোনেল সেকশনে নিয়োগ চাহিদা পাঠাতে হবে। পার্সোনেল সেকশন অনুমোদিত সংগঠন কাঠামোর (Organization Structure) সাথে চাহিদা মিলিয়ে দেখবে এবং উক্ত চাহিদার বিপরীত কোন পদ শূন্য থাকলে শূন্য পদের বিপরীতে লোক নিয়োগ করবে। চাহিদার বিপরীতে শূন্য পদ না থাকলে পার্সোনেল সেকশন সংশ্লিষ্ট সেকশন প্রধানকে তা অবহিত করবে। শূন্য পদ অবশিষ্ট না থাকার পরেও সংশ্লিষ্ট সেকশন যদি অতিরিক্ত লোক নিয়োগের প্রয়োজন অনুভব করে তাহলে পার্সোনেল সেকশন নির্ধারিত রিকুইজিশন ফরমে সংশ্লিষ্ট সেকশন কর্তৃক চাহিদাকৃত লোকবল, চাহিদার কারণ, সময়সীমা ইত্যাদি উলেখ পূর্বক কোম্পানীর ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিকট প্রেরণ করবে। ব্যবস্থাপনা পরিচালক চাহিদার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনা করে লোক নিয়োগের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রদান করবেন।
৪। সকল ধরনের নিয়োগ হবে যথাযথ নির্বাচন পদ্ধতির মাধ্যমে। কোম্পানীর কর্মী নিয়োগ ক্ষেত্রে কোন ধরনের বৈষম্য এবং স্বজন প্রীতির আশ্রয় নেয়া হবে না। পরিচালকবৃন্দের সুপারিশ/অনুমোদন ব্যতীত কোন ব্যক্তিগত অনুরোধ/সুপারিশের ভিত্তিতে পার্সোনেল সেকশন কাউকে নিয়োগ দিতে পারবে না।
৫। পরিচালক বৃন্দের সুপারিশ/অনুমোদন ব্যতীত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কোন কর্মকর্তা বা কর্মচারীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় স্বজনকে প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ করা যাবে না।
৬। গ্রুপের কোন কোম্পানী থেকে চাকুরিচ্যুত হয়েছে কিংবা চাকরী ত্যাগ করেছে এমন ব্যক্তিকে ফ্যাক্টরীতে নিয়োগ দিতে হলে পরিচালক বৃন্দের সুপারিশ বা অনুমোদন প্রয়োজন হবে।
৭। নিয়োগ চাহিদার উপর ভিত্তি করে পার্সোনেল সেকশন দৈনন্দিন নিয়োগের একটি সমন্বিত তালিকা প্রস্তুত করবে। তালিকা তৈরীতে ৩ নং ধারায় বর্নিত নিয়ম অনুসরণ করা হবে। প্রস্তুতকৃত তালিকার ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ নির্ধারণ করা হবে।
৮। নিয়োগ তালিকা প্রস্তুতির পর পার্সোনেল সেকশন প্রাথমিক নির্বাচনের জন্য চাহিদার ভিত্তিতে সাক্ষাৎ প্রার্থীদের পদ নির্ধারন করবেন, প্রাথমিক নির্বাচনে নির্বাচিত প্রার্থীর প্রত্যক্ষ দক্ষতা এবং সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য সংশ্লিষ্ট লাইন বা সেকশনে প্ররিত হবে। সংশ্লিষ্ট লাইন বা সেকশন থেকে নির্বাচিত প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সমপন্ন করার জন্য পুনরায় প্রাথমিক নির্বাচন কক্ষে (কাউন্সিলিং রুমে) ফিরিয়ে আনা হবে। অযোগ্য প্রার্থীদেরকে নিয়োগ দেয়া হবে না।
৯। সংশ্লিষ্ট সেকশন থেকে নির্বাচিত প্রার্থীদেরকে কোম্পানীর নিয়ম এবং নীতিমালা সম্পর্কে অবহিত করা হবে এবং একই সময়ে প্রার্থীদের বেতন এবং যোগদান তারিখ নির্ধারণ করা হবে। এই সময় প্রার্থীর প্রয়োজনীয় দলিলাদী তৈরী করা হবে এবং প্রয়োজনীয় স্বাক্ষর গ্রহন করা হবে।
১০। প্রার্থীর কাজে যোগদানের সাথে সাথে তাকে পরিচয়পত্র এবং পাঞ্চকার্ড প্রদান করা হবে। একই সাথে তার নামে একটি ফাইল তৈরী করা হবে যাতে তার সমস্ত দলিলাদী সংরক্ষিত থাকবে। কর্মী নির্বাচন নীতিমালা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে কার্যকরী হবে। সংশ্লিষ্ট সকলকে এই নীতিমালা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। উল্লেখ্য যে কোম্পানীর (Organization Structure) তৈরীর সময় বিভাগীয় প্রধানদের মতামতকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিলো।
অতএব, এটা আশা করা যায় বিভাগীয় প্রধান লোক নিয়োগের সময় নূন্যতম লোক নিয়োগের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষে নির্ধারিত অর্গানোগ্রামকে প্রাধান্য দেবে।
===0===0===0===
No comments